Friday, August 28, 2015

প্রাচীন জীবন

দশ হাজার বছর ধরে দু'হাজার স্বপ্ন দেখেছি
নির্বোধের অতলে অজানা বিজ্ঞান
ধোঁয়াটে নীল পুরস্কার!
রেলপথের ছোট ছোট পায়ে
ত্রিশ গজের হাসি
ভালবাসি
থেঁতলানো স্বপ্নের আকাশ
দু'শ বছরের পুরনো
আমার জীবন!


প্রাচীন কবিতার কবরে
ঝুলিয়ে গেছে কেউ আমার স্মৃতি
দেখেছিলাম সেদিন গ্রামীণ কফিন
কঁড়া নেশায় কেটেছিল সে ঘোর
স্বর্গের দু'হাজার মৃত স্বপন।

Monday, August 24, 2015

শেষ গল্পের শেষ

এখন আকাশে বৃষ্টি, দেখা যাচ্ছে না
রাতের বৃষ্টি দেখা যায় না
দেখতে গেলে ভিজতে হয়
সব সময় ভেজা যায় না।

এখন বৃষ্টিতে ভিজছে স্বপ্নেরা
কোলবালিশের ঘোলাটে তারারাও
দূর থেকে চেয়ে আছে
সু-দীর্ঘ দৃষ্টি নিয়ে দেখছে_
আমি কেমন আছি!

প্রথম তারাটা লাজুক শেষ তারাটা দেখে
তারও কি বয়স কম হয়েছে।

ভালকেই ভালবাসলে

তুমি কি জানো-
চুমু খেলে হজম করা লাগেনা
থেঁতলানো চিবুকের রসালো অনুভূতি
পরিমাপ করা যায় না।
জানো কি-
দেহের এপাশ ওপাশে উল্টিয়ে
ভালবাসা খোঁজা যায় না!
ক্যামেরা দিয়ে তোমায় দেখা যায়;
স্বপ্ন দেখা যায় না!

আগস্টের চাঁদ ভালবাসলে
কাঁচা ঠোঁট ভালবাসলে
ভালবাসলে পুষ্ট নগ্নতাকে
সময়ের কালক্ষেপণে
কেড়ে নেওয়াকে ভালবাসলে
শুধু ভালকেই ভালবাসলে
আমায় বাসলে না! 

বাকরূদ্ধ(গ্রামীণ কফিন)

আমি রবীন্দ্রনাথের মত উঁচুস্থানে বসিয়া সবাইকে দেখিতেছি আর হাসিতেছি! মানুষ কতটা পাগল! কতটা মূর্খ হলে সামান্য ঘটনাকে বড় করিয়া বাকযুদ্ধ করিতে পারে। ঘুম হতে উঠিয়া দৃষ্টি যুগল কচলাইতে কচলাইতে সেই যুদ্ধের সূচনা হয়। সূর্য যখন অন্তিমে গত হয়, তখনো ক্লান্ত রুগ্ন হয়ে আসা ধারালো তালোয়ারের মত অগ্নিবাক্য বিদ্ধ হয় হেরে যাওয়া মানুষের উপর। সমাজের উপর টিকটিকিরর মত মাথা মোটা মানুষ গুলো বড্ড সুন্দর কথা বলায় অভ্যস্ত! ধর্ষিতার যন্ত্রণার চাহিতে তাঁহাদের কথার যন্ত্রণা অনেক। যন্ত্রনা কত রকমের তাহারা বুঝিতেও চেষ্টা করেনা। বিষের যন্ত্রণা, ফোঁড়ার যন্ত্রনা, মৃত মানুষ স্মরণের যন্ত্রণা আরও আছে অনেক। নাম দেওয়া যায় না সবকিছুর। আমিও তাহাদের নাম না দেওয়া যন্ত্রণার কথা বোঝানোর চেষ্টা করিয়াছিলাম। তাহারা তা না বুঝিয়ায় বলিল- "সবাই সব কিছু পারেনা। তুমিও পারিবে না। তুমি "ও" হতে পারিবেনা"।
আমি রবীন্দ্র কিংবা নজরুল হতে চাই নি। আমি "আমি" হতে চেয়েছি!

Saturday, August 22, 2015

শেষের শেষ

অনেকদিন পর
রোদের তাপে বুক ছিড়েছে
বুকের কোণে মরুভূমি
স্বচ্ছজলে মুখ দুলেছে
দীর্ঘশ্বাসে মিলেছে
ঊনবিংশ শতাব্দীর শূন্যতা!

অনেকদিন পর
আবার এখানে যুদ্ধ ফিরেছে
যোদ্ধারা এখন বিশ্রামে,
অবসর যাপনে ব্যস্ত।
নিঃশব্দে যুদ্ধ বড় হয়েছে
আমি তাকিয়ে দেখেছি
দূর পাহাড়ের মত
খোলা মৃত চোখের মত
আমার বন্ধুরাও নিশ্চুপ!

অনেকদিন পর
আমি ক্লান্ত, ভিষনই ক্লান্ত
যুদ্ধহীন যুদ্ধে নিভুপ্রায় জীবন
রুক্ষ আশ্বাস খোঁজে, বোঝে-
বেঁচে থাকাটা শুধু বেঁচে থাকা নয়।

সব শেষ হবারও শেষ আছে
এ বিশ্বাসের নামই বেঁচে থাকা।

Wednesday, August 12, 2015

আপনজন মারা গেলে কি কষ্ট হয়?

আচ্ছা, আপনজন মারা গেলে কি খুব কষ্ট হয়? আসলে কষ্টটা কি? কষ্ট পেলে কি মানুষ কাঁদে? আচ্ছা, কষ্টটাকে কোন ভাবে মেরে ফেলা যায় না কিংবা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া যায় না? নাকি যায়? কষ্টটা কি এমন মেরে ফেললে বা পুড়িয়ে দিলে আর ফিরে আসবে না!
গত বছর আমার বন্ধু আতিকের মা মারা গেছিল। শুনার পর থেকে আতিকের সে কি কান্না! চাবুক দিয়ে আঘাত করলে বন্দি যেরকম চিৎকার করে কাঁদে। কারও মা মারা গেলে কি সেরকম কেউ আঘাত করে? তবে দেখা যায় না কেন? সকাল বেলা দু'চোখ ফুলে মাংসের থলী তৈরি হয়ে গেছিল। বয়স কম হওয়ায় কি করবো এই ভেবেই কিছু বলতে পারিনি। মাঝে মাঝে মনে হয়েছিল, আমি কাঁদি! কিন্তু সেরকম কেউ আঘাত করেনি। সেরকম কষ্টও হয় নি।
সাইকোলজিতে একটা বিষয় আছে। মানুষের মুখ দেখে বলে দেওয়া যায় সে কিরকম আছে! আজ আমার আপন কেউ মারা গেছে। সাইকোলজির সব থিওরি দিয়ে কি আজ বলা সম্ভব, আমি কেমন আছি!
নাহ আমি কাঁদছিনা! মানুষ মরে গেলে কাঁদতে হয় এমন পৃথিবীর কোথাও নেই! কোন মানুষের মুখেও শুনিনি এমন কথা। সিগারেট নাকি কষ্ট দূর করার দারুণ ঔষধ! আপন কেউ মারা গেলে সব মানুষ সিগারেট খেয়ে দেখতেই পারে! খাটলি ধরে সবাই কাঁদা বাদ দিয়ে সিগারেট খাবে। এতে কষ্ট থাকবে না। এখন আমার কষ্ট পেলে একটা খেয়ে দেখতাম! কেমন কাজে দেয়। মানুষ বেঁচে থাকাকালীন সব পরীক্ষা করে নেয়। কাঁচা বাজারে সবজি গুলোকে ভাল করে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখে কিনে। মানুষ খুতিয়ে দেখার কোন জিনিস আছে। খুতিয়ে দেখতাম, কোন মানুষটা জীবাণুহীন, কোন মানুষটা কতদিন বাঁচবে? সৃষ্টিকর্তা এমন বোধহয় দেন নি। দিলে আমি হিসাব করে আপনজন ঠিক করে নিতাম। ঠিক আপনজন মারা যাওয়ার একমিনিট আগে মারা জেতাম! এতে মরে যাওয়া মানুষ দেখার কষ্টটা পেতাম না। মানুষ বেঁচে থেকে স্বার্থপর হয়, আমি না হয় মরে যাওয়ার একমিনিট আগে হব!

Wednesday, August 5, 2015

চেতনাহীনতা

জীবনটা রোমান্টিকতায় ভাসছে।
লুসি আচারের থালা দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। মনে হয় সন্তান সম্ভাবনা! প্রেগন্যান্ট হলে নাকি মেয়েরা বেশি আচার খায়!
সেদিন সূর্য গ্রহণ লেগেছিল। তা দেখে চিমটি তরকারী কাঁটা বাদ দিয়ে সারাদিন শুয়েছিল। চিমটি ওর বান্ধবীর কাছে থেকে শুনেছে সূর্য গ্রহণের দিন কাটাকুটি করতে নেই। সন্তান হবার সময় নাকি সন্তান প্রতিবন্ধী হয়। আসল কথা হল- চিমটির ঋতুস্রাবই শুরু হয় নি!
গত বছর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে জারার বিয়ে হয়েছে। ওর বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কোলে একমাসের বাচ্চা। বাতির শিখায় অর্জুনের ছাল সেকে বাচ্চার কপালে নজর ফোটা দিচ্ছে। নজর ফোটা দিলে বাবুর রোগবালাই হবে না। জারার শাশুড়ি বলেছে - ভাই ফোটার মতই পবিত্র নজর ফোটা। ধর্মে তারা মুসলিম।
জীবনটা রোমান্টিকতায় ভাসছে।
বন্যার তিনমাস পরে বিয়ে। এখন থেকেই সে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিসের সেটা বোঝা না গেলেও এটা স্পষ্ট যে, সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তার একটা সংসার হবে। সুন্দর সংসার। এ নিয়ে বান্ধবী আর ভাবির সাথে রোজ আলোচনা হয়।
জীবনটা রোমান্টিকতায় ভরে গেছে।
সব সময় ক্লাসে ফাস্ট হওয়া তামান্না গত অমাবস্যা রাতে গাঁজাখোর রিফাতের সাথে পালিয়েছে। কপালপোড়া বাবা-মা'র জন্য একখানা চিঠি লিখে গেছিল। সে নাকি ওকে নিয়েই সুখে থাকবে। গতকাল আমার প্রাণের বন্ধু পোল্টি বলছিল- তামান্না সুইসাইড করেছে! আমি কখন বলে সে কথা আর দীর্ঘ করিনি।
ইভার বাবা মা জামাই দেখতে খুবই ব্যস্ত। গত পাঁচ বছর ধরে এই কাজই করে যাচ্ছে! সাধারণ দশটা মেয়ের মতই পড়ালেখা জানা, সুন্দর, সুস্থ মেয়ে ইভা। শুধু গায়ের রঙ কালো বলেই কপালে একটা ছেলে জুটলো না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে মরে যেতে। যতবার চেয়েছে ঠিক তখনই সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়েছে- আত্বহত্যা মহাপাপ।
কলেজ জীবনের শেষদিকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। নামটা মনে করতে পারছিনা। ফেসবুকের নামটা মনে আছে, এঞ্জেল প্রিন্সেস! ফেসবুকে ম্যাসেজের উত্তর না দেওয়ার জন্য নাকি কয়েকজন দ্বারা ধর্ষণ হয়েছিল! মানুষ কত সুন্দর না¿ অধিকার আদায়ে অবিচল সবসময়।
সবে আঠারতে পা দেওয়া তিশা স্বামীর ঘর ছেড়েছে একবছর হল। রোজ জানালা দিয়ে আকাশে মেঘে ঢাকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবে "আমার জীবনটাও এমন মেঘে ঢাকা"। কিন্তু কয়দিন পরে পাড়ার যোয়ান ছেলে হৃদয়ের সাথে পালানোর কথা ভাবছে।
চাঁদের মত একা বেশিদিন থাকা যায় না। পারেনা মানুষ একা বাঁচতে। মা হারা বিড়ালের মত ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে দীর্ঘবছর পার করলেও একসময় আর পারেনা। কচ্ছপের মত খোঁজে সমুদ্রের তীর! খাবার আর আশ্রয়। মানুষ কত কিছুই খায়। কত জায়গাতেই তো আশ্রয় নেয়। খাবারের সাথে জীবানু খায়, খায় কত অভিমান! ইট থেকে পলিথিনের ঘরেও মানুষ আশ্রয় নেয়। নেয় কত মানুষ কত মানুষের বুকে! মানুষের বুক গুলোও প্রকৃত ঘরের মত সুন্দর, ফুটো ফাটা, বিশ্রী হয়।
শেষ আরেকটা মেয়ের কথা মনে পড়ে। হ্যাঁ, বান্দরবনের পাহাড়ী মেয়ে। ভাল লেগেছিল যতদিন ছিলাম! বাসায় আসার পর আর মনে ছিলনা। কয়েকমাস পর একটা চিঠি এসেছিল। ভাঙা ভাঙা শব্দে লেখাছিল- আমি চাঁদ দেখি রোজ। কথাটার মানে এখনো বুঝিনি!
আলাদীনের চেরাগের ভিতরেই কেটে যায় প্রত্যেক মেয়ের জীবন। কয়েকজন এর বাইরে বের হলেও হেরে যায় নিজের কাছে। আগষ্টের চাঁদে নিজেকে যখন মেলে ধরে দূর্গন্ধযুক্ত পশম ওয়ালা কারও বুকে।
কিছুক্ষনের জন্য হয়তো সব ভুলে যায়। তারপর অন্ধকারে শেকলে জড়িয়ে তাকিয়ে থাকে সেই চাঁদের দিকে! আশ্রয়হীন জঞ্জাল পশুর মত জীবন শুধু চেয়ে দেখার জীবন। আশা আর নিরাশার মাঝে থাকতে থাকতে হাঁটু ভেঙে সব মেনে নেয়। জীবনের গহব্বরে ডুবতে ডুবতে কিনারায় ঠায় নেয় তখন কতিপয় লোক বেজন্মা বেশ্যা বলে সুনামে লিপ্ত হয়। তারা কখনো প্রশ্ন করে বসে না- আচ্ছা পুরুষ বেশ্যা হয় না! মেয়েদের শরীরের প্রতিটা অংশের দোষ খুঁজতে খুঁজতে কিছুই যখন আর বাকি থাকেনা তখন আটকিয়ে দেওয়া হয় নিয়মের রক্ষার্থে। পুঁটি মাছের মত জীবনকে নিয়ে খেলতে বোয়াল মাছের বড় ভালই লাগে। তারাও খেলে আলোর সাথে, আঁধারের সাথে, নিয়মের সাথে, সৃষ্টির সাথে, আর আকাশের চাঁদের সাথে। তাদের সবাই ফেলিয়ে দিলেও চাঁদ কখনো ফেলিয়ে দেয় না। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে চাঁদের সাথেই কথা বলে মানুষের সাথে নয়।

Saturday, August 1, 2015

অস্তিত্বের গান

একদিন জোনাকির আসরে
রোদ্রময় খামখেয়ালি ভালবাসা
আকাশে চোখ তুলে দেখবে
ধূসর স্মৃতি জেগে উঠে
হয়তোবা ফিরে পাবে-
আমাদের সংবিধান।
বিস্তৃত বেদনার শ্বাসমূল ঘিরে
অহেতুক বিচ্ছেদের মিশ্রণে
হাসাবে আমাদের!
গিটারের ফ্রেডের চিৎকারে
বেরিয়ে আসবে আমাদের বন্ধুত্ব-
ইতিহাসের মতো বাড়ে, কমে না।

একদিন সময়ের ডালে
বর্ণাট্য আসর জমবে
নিশিনাগিন শব্দ তুলে নাচবে
জোনাকির ছটা পড়বে-
আমাদের গায়ে।
স্বাপ্নিক নিশ্ছিদ্র বাসরের ঘ্রাণ
চিরচেনা আড্ডায় খুঁজে পাব
হাতের তালুই মিলবে হাসি
ভেষজ বাতাসে হব ক্লান্তহীন।

কুয়াশায় ভিজিয়ে দেবে ঝাল মুড়ি
শুক্রবারের সব পরিকল্পনা
জ্যোৎস্নার আলোই লুকোচুরি
বার্ধক্যের সব আঁধার
স্পর্শের দিনগুলি থাকবে
হয়তোবা অস্তিত্বে গাঁথা।

একদিন বদলে যাবে আকাশ
বদলে যাবে বয়স্ক সময়
থুর থুরে বুড়ো হবে
অনেক কথা সথা হবে
এক কাপ চায়ে, শীতে
হাস্যজ্জ্বল হবে সন্ধ্যা
নীলের কুঠুরিতে
জ্বলবে আগুন,
মোড়াবো চাদর গায়ে
কণ্ঠে থাকবে অঞ্জন'দার-
কুয়াশায় ঢাকা সেই পাইন গাছের ফাকে ফাকে রোদ্দুর......... আমার পাহাড়ী ছেলেবেলার একটা গান।