জীবনটা রোমান্টিকতায় ভাসছে।
লুসি আচারের থালা দেখিয়ে দেখিয়ে খাচ্ছে। মনে হয় সন্তান সম্ভাবনা! প্রেগন্যান্ট হলে নাকি মেয়েরা বেশি আচার খায়!
সেদিন সূর্য গ্রহণ লেগেছিল। তা দেখে চিমটি তরকারী কাঁটা বাদ দিয়ে সারাদিন শুয়েছিল। চিমটি ওর বান্ধবীর কাছে থেকে শুনেছে সূর্য গ্রহণের দিন কাটাকুটি করতে নেই। সন্তান হবার সময় নাকি সন্তান প্রতিবন্ধী হয়। আসল কথা হল- চিমটির ঋতুস্রাবই শুরু হয় নি!
গত বছর স্কুল পড়ুয়া মেয়ে জারার বিয়ে হয়েছে। ওর বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম কোলে একমাসের বাচ্চা। বাতির শিখায় অর্জুনের ছাল সেকে বাচ্চার কপালে নজর ফোটা দিচ্ছে। নজর ফোটা দিলে বাবুর রোগবালাই হবে না। জারার শাশুড়ি বলেছে - ভাই ফোটার মতই পবিত্র নজর ফোটা। ধর্মে তারা মুসলিম।
জীবনটা রোমান্টিকতায় ভাসছে।
বন্যার তিনমাস পরে বিয়ে। এখন থেকেই সে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিসের সেটা বোঝা না গেলেও এটা স্পষ্ট যে, সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তার একটা সংসার হবে। সুন্দর সংসার। এ নিয়ে বান্ধবী আর ভাবির সাথে রোজ আলোচনা হয়।
জীবনটা রোমান্টিকতায় ভরে গেছে।
সব সময় ক্লাসে ফাস্ট হওয়া তামান্না গত অমাবস্যা রাতে গাঁজাখোর রিফাতের সাথে পালিয়েছে। কপালপোড়া বাবা-মা'র জন্য একখানা চিঠি লিখে গেছিল। সে নাকি ওকে নিয়েই সুখে থাকবে। গতকাল আমার প্রাণের বন্ধু পোল্টি বলছিল- তামান্না সুইসাইড করেছে! আমি কখন বলে সে কথা আর দীর্ঘ করিনি।
ইভার বাবা মা জামাই দেখতে খুবই ব্যস্ত। গত পাঁচ বছর ধরে এই কাজই করে যাচ্ছে! সাধারণ দশটা মেয়ের মতই পড়ালেখা জানা, সুন্দর, সুস্থ মেয়ে ইভা। শুধু গায়ের রঙ কালো বলেই কপালে একটা ছেলে জুটলো না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে মরে যেতে। যতবার চেয়েছে ঠিক তখনই সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়েছে- আত্বহত্যা মহাপাপ।
কলেজ জীবনের শেষদিকে একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছিল। নামটা মনে করতে পারছিনা। ফেসবুকের নামটা মনে আছে, এঞ্জেল প্রিন্সেস! ফেসবুকে ম্যাসেজের উত্তর না দেওয়ার জন্য নাকি কয়েকজন দ্বারা ধর্ষণ হয়েছিল! মানুষ কত সুন্দর না¿ অধিকার আদায়ে অবিচল সবসময়।
সবে আঠারতে পা দেওয়া তিশা স্বামীর ঘর ছেড়েছে একবছর হল। রোজ জানালা দিয়ে আকাশে মেঘে ঢাকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবে "আমার জীবনটাও এমন মেঘে ঢাকা"। কিন্তু কয়দিন পরে পাড়ার যোয়ান ছেলে হৃদয়ের সাথে পালানোর কথা ভাবছে।
চাঁদের মত একা বেশিদিন থাকা যায় না। পারেনা মানুষ একা বাঁচতে। মা হারা বিড়ালের মত ফুফিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে দীর্ঘবছর পার করলেও একসময় আর পারেনা। কচ্ছপের মত খোঁজে সমুদ্রের তীর! খাবার আর আশ্রয়। মানুষ কত কিছুই খায়। কত জায়গাতেই তো আশ্রয় নেয়। খাবারের সাথে জীবানু খায়, খায় কত অভিমান! ইট থেকে পলিথিনের ঘরেও মানুষ আশ্রয় নেয়। নেয় কত মানুষ কত মানুষের বুকে! মানুষের বুক গুলোও প্রকৃত ঘরের মত সুন্দর, ফুটো ফাটা, বিশ্রী হয়।
শেষ আরেকটা মেয়ের কথা মনে পড়ে। হ্যাঁ, বান্দরবনের পাহাড়ী মেয়ে। ভাল লেগেছিল যতদিন ছিলাম! বাসায় আসার পর আর মনে ছিলনা। কয়েকমাস পর একটা চিঠি এসেছিল। ভাঙা ভাঙা শব্দে লেখাছিল- আমি চাঁদ দেখি রোজ। কথাটার মানে এখনো বুঝিনি!
আলাদীনের চেরাগের ভিতরেই কেটে যায় প্রত্যেক মেয়ের জীবন। কয়েকজন এর বাইরে বের হলেও হেরে যায় নিজের কাছে। আগষ্টের চাঁদে নিজেকে যখন মেলে ধরে দূর্গন্ধযুক্ত পশম ওয়ালা কারও বুকে।
কিছুক্ষনের জন্য হয়তো সব ভুলে যায়। তারপর অন্ধকারে শেকলে জড়িয়ে তাকিয়ে থাকে সেই চাঁদের দিকে! আশ্রয়হীন জঞ্জাল পশুর মত জীবন শুধু চেয়ে দেখার জীবন। আশা আর নিরাশার মাঝে থাকতে থাকতে হাঁটু ভেঙে সব মেনে নেয়। জীবনের গহব্বরে ডুবতে ডুবতে কিনারায় ঠায় নেয় তখন কতিপয় লোক বেজন্মা বেশ্যা বলে সুনামে লিপ্ত হয়। তারা কখনো প্রশ্ন করে বসে না- আচ্ছা পুরুষ বেশ্যা হয় না! মেয়েদের শরীরের প্রতিটা অংশের দোষ খুঁজতে খুঁজতে কিছুই যখন আর বাকি থাকেনা তখন আটকিয়ে দেওয়া হয় নিয়মের রক্ষার্থে। পুঁটি মাছের মত জীবনকে নিয়ে খেলতে বোয়াল মাছের বড় ভালই লাগে। তারাও খেলে আলোর সাথে, আঁধারের সাথে, নিয়মের সাথে, সৃষ্টির সাথে, আর আকাশের চাঁদের সাথে। তাদের সবাই ফেলিয়ে দিলেও চাঁদ কখনো ফেলিয়ে দেয় না। তাই জানালা দিয়ে তাকিয়ে চাঁদের সাথেই কথা বলে মানুষের সাথে নয়।